বাঙালির নবান্ন উৎসব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : সন্ধ্যা ০৬:১৪:০০ শুক্রবার ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২০

বাঙালির নবান্ন উৎসব

মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। ফলন যেমনই হোক, কৃষকের মুখে ধানকাটার গান মনে করিয়ে দেয় নবান্ন উৎসবের কথা।

নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরও গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি ছেয়ে যায় সোনালি ধানের ক্ষেত। পাকা ধানের সোনালি রঙ দেখে কৃষকের মন ভরে যায় আনন্দে। কারণ, কৃষকের গোলা ভরে উঠবে ধানে। বছর ঘুরে আবার এসেছে অগ্রহায়ণ। বাঙালির প্রধান কৃষিজ ফল কাটার ক্ষণ।

স্মরণাতীত কাল থেকে বাঙালির জীবনে পয়লা অগ্রহায়ণকে বলা হয়ে থাকে বার্ষিক সুদিন। এ দিনকে বলা হয় নবান্ন। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলার ঐতিহ্যগুলো ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। 

নবান্নের শাব্দিক বিশ্লেষণ
‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নবান্ন ঋতু কেন্দ্রিক একটি উৎসব। হেমন্তে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব পালিত হয় অগ্রহায়ণ মাসে। অগ্র অর্থ ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’। এ থেকে সহজেই ধারণা করা হয়, এক সময় অগ্রহায়ণ মাসই ছিল বাংলা বছরের প্রথম মাস। এ মাসটি আবহমান বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও মাটির সঙ্গে চির বন্ধনযুক্ত। কিন্তু শিল্পায়ন ও নগরায়নের কষাঘাতে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার আনন্দময় সরল জীবন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তরুণ প্রজন্মের ওপর পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাব। তবে নাগরিক জীবনে নবান্নের শুভক্ষণের শুভ ছায়া ছড়িয়ে দিতে অগ্রহায়ণের প্রথমদিনে আয়োজন করা হয় নবান্ন উৎসব। সত্যিই কথা বলতে কী- শহুরে জীবনে যে নবান্ন উৎসব করা হয়, সেটা তো প্রতীকী।

খাদ্যসংগ্রহের প্রাচীন উৎসব
মূলত: সমাজ ও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের খাদ্য সংগ্রহ ও খাদ্য উৎপাদনের সাফল্যকে কেন্দ্র করে উদ্ভব ঘটেছে নানা উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠানের। অরণ্যচারী আদিম মানুষ যখন খাদ্য উৎপাদন করতে শেখেনি, বেঁচে থেকেছে কেবলমাত্র প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত খাদ্যের জোরে। সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘খাদ্য আহরণ অর্থনীতি’র সেই আদিস্তরেও খাদ্য সংগ্রহের সাফল্যে উৎসবের আয়োজন হয়েছে তাদের দলে বা গোষ্ঠিতে। এমনি এক উৎসবের প্রথম আয়োজন হয়েছিল হয়তো বড় দুর্জয় কোন বন্যপশু শিকারের আনন্দকে বড় রূপ দেওয়ার জন্য।

দক্ষিণ ফ্রান্সের ‘টোরেস ফেরেস’ গুহাগাত্রে পাথর খোদাই করে অঙ্কিত হরিণের চামড়া ও শিং পরে নৃত্যরত মানুষের চিত্রসহ আরও অনেক গুহাচিত্র থেকে সমাজ বিজ্ঞানীরা এমনটাই মনে করেন। আফ্রিকার ব্যুশম্যান উপজাতির মধ্যে আজও প্রচলিত ‘কৃষ্ণষাঁড় নৃত্য’, যা  খাদ্য সংগ্রহের সাফল্যকেন্দ্রিক একটি প্রাচীন উৎসব। এ ধরনের উৎসব আদিম মানুষকে খাদ্য আহরণে সংঘবদ্ধ ও সাহসী করেছে। সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতার যখন ‘খাদ্য আহরণ’ যুগ থেকে ‘খাদ্য উৎপাদন’ অর্থাৎ কৃষি অর্থনীতির যুগে উত্তরণ ঘটে তখন ফসল উৎপাদনের পেছনে কোন না কোন অদৃশ্য দৈব শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কার। যার ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন কেন্দ্রিক উৎসবের ধরন বৈচিত্রপূর্ণ এবং তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের দৈবশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে নানা আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা যুক্ত হয়েছে এসব উৎসবে।

ধর্মীয় রীতি-নীতিতে নবান্ন
‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। সাধারণ অর্থে নতুন ধানের ‘অন্ন’ বা খাদ্য প্রথম খাওয়ার আনুষ্ঠানিকতাই হল ‘নবান্ন’ উৎসব । নতুন আমন ধান ঘরে তোলার আনন্দে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনে এই ‘নবান্ন’ উৎসব পালিত হয়।

‘নবান্ন’ উপলক্ষে নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য-সামগ্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী এসব আচার- আনুষ্ঠানিকতায় বৈচিত্র রয়েছে। মুসলিম কৃষক সমাজে নতুন ফসল ঘরে ওঠার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বাড়ি বাড়ি কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মসজিদ ও দরগায় শিরনির আযোজন করা হয়।

হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী অন্ন লক্ষ্মীতুল্য। তাই তারা এ দেবীর উদ্দেশ্য পূজা-অর্চনার আয়োজন করে। এছাড়া, নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাঁক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়জনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন।

নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাঁককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাঁকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাঁকবলী’। অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। হিন্দু শাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুসারে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্র মতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং আদিবাসী সমাজেও নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি-নীতি, বিশ্বাস ও প্রথা অনুযায়ী নবান্ন উৎসব পালন করা হয়।

আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন
নবান্ন এক অসাম্প্রদায়িক উৎসব। নবান্ন উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে। নবান্ন উৎসব বাঙালির জনজীবনে অনাবিল আনন্দ, সুখ ও সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে 
বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে নবান্ন উৎসবের সাথে। কৃষি নির্ভর এই সমাজে কৃষিজমির সাথে আমাদের নীবিড় সম্পর্ক সূত্রেই নবান্ন হয়ে উঠেছে বাংলার লোকায়িত উৎসব। 

মাঠ ভরা ধানে সোনালী ছোঁয়া লাগলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যেত যে নবান্ন আসছে। কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যেত ধান মাড়াইয়ের কাজ, চলত বাড়িঘর, ঢেঁকিঘর নিকানোর কাজ। নতুন ধান থেকে চাল ছাঁটা হত ঢেঁকিতে। তৈরি করা হত চালের গুঁড়া। চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠে তৈরি হত নবান্নে। এছাড়া চালের গুঁড়া দিয়ে আঁকা হত মাঙ্গলিক আলপনা। বাড়ির মহিলা সদস্যরা ব্যস্ত থাকতেন চিঁড়ে, মোয়া, নাড়ু এসব তৈরিতে। এক সময় নবান্ন উৎসব উপলক্ষে চলতো খন ও বিষহরি পালাগানের আসর, বসত মেলাও। নবান্নে পাকা ধান দেখে চাষী আনন্দে গেয়ে উঠত।

আমাদের দেশে আবহমান কাল ধরে প্রচলিত এই ‘নবান্ন’ উৎসব সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক, সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীনতম মাটির সঙ্গে চিরবন্ধনযুক্ত। তাই নবান্ন উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বি শেষে কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দের সারা পড়ে যায়। কৃষকের আঙ্গিনা-উঠোন লেপে-পুছে ঝকঝকে তকতকে করে তোলা হয়। নতুন কাস্তে, ডালি, কুলা, চালুনি, জাটা, চাটাই তৈরি হয়। কৃষক মাথায় অথবা কোমরে নতুন গামছা বেঁধে সোনার ধান কেটে নিয়ে আসে উঠোনে। 

কৃষাণ বধূর ব্যস্ততা বেড়ে যায় ধান মাড়াই-ঝাড়াই, সেদ্ধ-শুকানো, চাল-আটা তৈরি আর রকমারি রান্না-বান্না নিয়ে। ধান ভানার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। অবশ্য যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকির তালে মুখরিত হয় না আমাদের গ্রামগুলো। তারপরও নতুন চালের ভাত নানা ব্যঞ্জনে মুখে দেওয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশে। তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা-পুলি, ক্ষীর-পায়েস ইত্যাদি। 

দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে নবান্নে বাড়ির জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। নবান্ন উপলক্ষে অনেক গ্রামে লোকমেলার আয়োজন হয় কোন বটের তলায় কিংবা খোলা মাঠ-প্রান্তরে। নবান্ন উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন হলো এই লোকমেলা। এই মেলায় পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পিঠা, মিষ্টি, সন্দেশ, মন্ডা-মিঠাই, খেলনা-পুতুল, মাটি-বাঁশ-বেত কাঠের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আর বসে পালাগান, লোকনাট্য, কেচ্ছা-কাহিনী, বাউল গানের আসর। নাচ আর গানে মুখরিত হয় মেলাপ্রাঙ্গণ। প্রকৃতি আর পরিবেশের মধ্যে আত্মহারা হয়ে ওঠে বাঙালিমানস।

বাংলা সাহিত্য নবান্ন 
বাংলার কবি-সাহিত্যিকরাও নতুন ফসল ঘরে ওঠার ঋতু হেমন্ত আর নবান্ন উৎসবকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা-গান। ষড়ঋতুর লীলাবৈচিত্রে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে অগ্রহায়ণ মাস তথা হেমন্ত ঋতু আসে নতুন ফসলের সওগাত নিয়ে। কৃষককে উপহার দেয় সোনালী দিন। তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো সোনালী ধানের সম্ভার স্বগৌরবে বুকে ধারণ করে হেসে ওঠে বাংলাদেশ। তাই বিপুল বিস্ময়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গেয়ে ওঠেন-

‘ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥’ হাসি ফোটে কৃষকের মুখেও; মাঠ ভরা সোনালী ফসল নতুন স্বপ্ন জাগায় চোখে।

কবি সুকান্ত’র ভাষায় যেন-‘নতুন ফসলের সুবর্ণ যুগ আসে।’ ‘এই হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’। নবান্নের বর্ণনা তিনি তাঁর ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন। হেমন্ত ঋতুর দিন-রাতের অবিশ্রান্ত শ্রমে কৃষকের ঘরে ওঠে সোনার ধান। বাংলার গ্রাম-গঞ্জ মেতে ওঠে নবান্নের উৎসবে।

‘ঋতুর খাঞ্জা ভরিয়া এল কি ধরণীর সওগাত? নবীন ধানের আঘ্রাণে আজি অঘ্রাণ হল মাৎ।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় এভাবে নতুন আমন ধানের আঘ্রাণে অগ্রহায়ণকে মাৎ করে দেওয়ার কথা উচ্চারিত হয়েছে।

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন হেমন্তে মাঠ ভরা ফসলের সম্ভারে মুগ্ধ হয়ে বলেন-
‘আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান,
সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি-কোটার গান।
ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়,
কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়।'

কবি আল মাহমুদ লেখেন-
‘আজ এই হেমন্তের জলজ বাতাসে/আমার হৃদয় মন মানুষীর গন্ধে ভরে গেছে/রমণীর প্রেম আর লবণ সৌরভে/আমার অহংবোধ ব্যর্থ আত্মতুষ্টির ওপর/বসায় মার্চের দাগ, লাল কালো কট ও কষায়।' 

হেমন্ত তো এমনই। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাই হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান হয়ে প্রকৃতির হাতচিঠি পৌঁছে দেন মানুষের রুদ্ধ দুয়ারে। সে দুয়ারের দ্বার শীতের আগে খুললেও স্পর্শসুখ মরমে পৌঁছায় তো?

দিনবদলের পালায় গ্রামের মানুষের কাছে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে নবান্নের আনন্দ। আগে নতুন ধান গোলায় ওঠার সময়ে যেভাবে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত, তা যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠা-পুলি, পায়েশের সেই আয়োজন আর তেমন চোখে পড়ে না। সময় পরিবর্তনের হাওয়ায় সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন। এখন নাগরিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে গ্রামীণ সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। 

নবান্ন উৎসবের মতো গ্রামবাংলার অন‌্যান‌্য ঐতিহ‌্যও হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে এখন পারিবারিক বন্ধনটা আর আগের মতো নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি আত্মিক টান কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সংস্কৃতিতে। পিঠা-পুলি খাওয়ার ঐতিহ‌্য হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো দেখা যায় না। নবান্নের উৎসব এখন মেকি আনুষ্ঠানিতকতার মধ‌্যে সীমাবদ্ধ।

গ্রামীণ জনপদে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ আছে কিন্তু কৃষকের ঘরে নেই নবান্নের আমেজ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। সিকি শতাব্দী পূর্বেও নবান্নের ধান কাটার উৎসবে মুখরিত হতো গ্রামের প্রতিটি আঙ্গিনা। গ্রামীণ জনজীবনে নবান্ন উৎসব এখন শুধুই স্মৃতি।

বাঙালির নবান্ন তথা উৎসবের ঋতু হেমন্ত, নবান্নের আশা জাগানিয়া, দুঃখ ভোলানিয়া হেমন্ত। স্বপ্নের জাগরণে হতাশা আর নিরাশা ভুলে চলতো নবান্নের উৎসব। পাক পালাগান, জারি গান, কবি গান আর গাজীর গীতের আসর জমানো হতো প্রকৃত গ্রামবাংলায়।

অগ্রহায়ণের প্রথম দিনের আশা হোক, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে হেমন্ত আসুক অপার সম্ভাবনা আর সমৃদ্ধির শুভ সংবাদ নিয়ে।
এএইচ/



© 2023 - 2024 সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। Newstorongo

নির্মাণে